গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মাদারীপুরের জনজীবন। প্রখর রোদের পাশাপাশি ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি মিলেছে না কোথাও। ফলে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। গরমে হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। গত ১০ দিনে হাসপাতালে ২০৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্করাই বেশি। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও কয়েক দিন এমন আবহাওয়া অব্যাহত থাকার পর বৃষ্টি নামতে পারে।
মাদারীপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় শনিবার (১৬ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বিকেল ৩টার দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও দুপুরের প্রখর রোদে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। একটু প্রশান্তির আশায় মানুষকে গাছের ছায়ায় কিংবা শীতল কোনো স্থানে বসে থাকতে দেখা গেছে। গরমে অনেকেই পুকুর কিংবা নদীতে নেমে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন।
এদিকে গরমে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না শ্রমিকরা। গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে ডাব, তরমুজ, বাঙ্গি, শসা ও সবজির। এছাড়া কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমে জ্বর, ঠান্ডা, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীও বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে।
মাদারীপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ দিনে শুধু ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ২৭৫ জন রোগী। তাদের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ২০৫ জন। এছাড়া ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু ও বয়স্ক।
৩ মাসের শিশু নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম বেগম বলেন, গরমে আমার সন্তানের ডায়রিয়া হয়েছে। তাই দুদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করাচ্ছি। হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অনেকে মেঝেতে অবস্থান করছেন।
শহরের রিকশাচালক জলিল ফকির বলেন, রোজা রেখে এত গরমে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে গাছের নিচে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার চালাই। সামনে ঈদ। অনেক খরচ, তাই বসেও থাকতে পারি না।
শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকার চায়ের দোকানদার সুমন বলেন, এই কয়েক দিনের গরমে অবস্থা খুব খারাপ। এক রোজার মাস, তার ওপর আবার গরম। তাই দিনে বেচাকেনা খুব কম। সন্ধ্যার দিকে একটু বেচাকেনা হয়।
Dhaka post
মাদারীপুর আবহাওয়া অফিসের অফিস ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এপ্রিল মাসে গরমের প্রভাব এবার বেশি। তবে রাতের তাপমাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক। দুপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে গরমে অনেক কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই বৃষ্টি হতে পারে।
মাদারীপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহম্মদ খান বলেন, দিনে তাপমাত্রা বেড়ে আবার রাতে অনেকটা কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সকলকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করতে হবে এবং পানিটা যেন নিরাপদ হয়। গরমে রোগ এড়াতে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।